OTT Review: ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে কেমন রান্না, খেয়েছেন?

fontIcon
Indubala Bhater Hotel Review
14 Mar 2023, 06:35:23 PM IST
Image Source: iStock

  • উপন্যাস Indubala Bhater Hotel এখন ওটিটি সিরিজ
  • চারটি এপিসোড দেখার পরেই আলোচনা শুরু
  • উপন্যাসের মতোই ভালো লাগা তৈরি করল এই সিরিজ?
  • শুভশ্রী, স্নেহাদের অভিনয়ই বা কেমন হলো?


Indubala Bhater Hotel Review :  ১৪/২ ছেনু মিত্তির লেন। কলকাতা ৭০০০০৯। সাইনবোর্ডের মাথায় একটা বাল্ব। মধ্যে লাল হরফে লেখা: ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। সরু একফালি গলি। ভেতরে ঢুকে, ডানদিকে ঘুরে দু-পা এগোলেই চোখে পড়বে খানদশেক বেঞ্চ আর দেওয়ালে ঝুলছে একটা ব্ল্যাকবোর্ড। কী কী আছে আজকের মেনুতে? ব্ল্যাকবোর্ড বলছে: ভাত, সোনা মুগডাল, বেগুন ভাজা, কুমড়োর ছক্কা, পার্শের সর্ষে ঝাল। শুনেই চেখে দেখতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই?

 
এ তো আসলে ইম্যাজিনেশানের স্বাদ। তাই চোখে দেখতে হবে। সদ্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে: ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। সদ্য, হইচইও কম হয়নি কল্লোল লাহিড়ীর এ উপন্যাস নিয়ে। যা অবলম্বন করে, খানিক লাউগাছের মতোই, বেড়ে উঠেছে দেবালয় ভট্টাচার্য পরিচালিত নতুন এই সিরিজ। প্রথম চারখানা এপিসোড আপাতত দেখতে পাওয়া গেছে। বাদবাকি মাসের শেষপ্রান্তে। চব্বিশ তারিখ।


কে এই ইন্দুবালা? কেমন করেই বা এসে পড়ল কলকাতার ওপর? সে কি সুরমা নদীর সেই গাংচিল? হেমাঙ্গ বিশ্বাস যেমন বলেছিলেন! আজ্ঞে, তা বললে অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশের খুলনা জেলার কলাপোতা গ্রামের এক কিশোরি ইন্দুবালা। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে হেসে বেড়ায়, খেলে বেড়ায়, আর মনভরে আমতেলের আচার খায়। ততদিনে দেশভাগ হয়ে গেছে। তারপর ইন্দুবালার বিয়ে। বিয়ের পরে সেই যে ইন্দুবালা কলকাতায় এল, আজীবন ওই ছেনু মিত্তির লেনের বাড়িতেই রয়ে গেল। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ এলো। ভারতবর্ষে সত্তর দশক এলো। ইন্দুবালার মুক্তি হল না! তাকে আচমকাই জাপ্টে ধরল এক হোটেল। দ্যাশের বাড়ি, তার কোনও এক স্বপ্নঘোরে তলিয়ে গেল যেন।

 
সিরিজের যে চারটি এপিসোড দেখলাম, তা মূলত ইন্দুবালার তিন সময়রেখায় বিস্তৃত। কিশোরিবেলা, সেই বেলা পেরিয়ে নারী এবং সর্বশেষ— বার্ধক্য। তিন সময়রেখা পরস্পরের সমান্তরালে চলেছে। কেবল বদলে বদলে গেছে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দৃশ্যের কালার প্যালেট। ভাষা।


ভাষার এক নিজস্ব পলিটিক্স আছে। মূল উপন্যাসে তা ধিকিধিকি জ্বলেছিল। সঙ্গে প্রকট হয়ে ছিল নকশাল আন্দোলন। দ্বিতীয় অধ্যায় থেকেই। কিন্তু, সিরিজের প্রথম পর্যায়ে, এই দুই উপাদানের, দ্বিতীয়টির সন্ধান একেবারেই পাওয়া গেল না। গল্পের তেমন বৈপরীত্য নেই, তেমন কোনও প্রবল ঘটনা নেই। দেবালয় ভট্টাচার্য হয়তো যথেষ্ট সময় ও যত্ন নিতে চেয়েছেন ইন্দুবালার চরিত্র-নির্মাণে। বারেবারেই তাই অনুভূত হয়েছে মৃদুগতি। তবে এ আমরা আগেও তো দেখেছি। তাঁর ‘ড্রাকুলা স্যর’ ছবিতে। ‘মন্টু পাইলট’ সিরিজে। শেষ করার তাড়া যদি পরিচালকের না থাকে এইবার, তবে বাংলা সিরিজের অতিশয় বিচ্ছিরি মার্কেটে, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ জ্বলজ্বল করবে।

ott review

 
ইন্দুবালার কথা বলার ধরন শুনে যখন তার শাশুড়ি ঝাঁজমিশিয়ে বলেন, ‘ওসব রিফিউজি ভাষা এখানে চলবে না!’, তখন ইন্দুবালার ভেতরে একই সঙ্গে নিজের ঘর ও নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয়-বেদনা খেলা করে। ক্রমাগত একা হওয়ার ভয়। মানুষমাত্রই স্মৃতির প্রতি যে অমোঘ আকর্ষণ, তা-ই এই আপাত-দেখা সিরিজের মূল সুর। যে সুরের মধ্যে মিশে যায় বিষাদ ও সংগ্রাম।

 
দেবালয় ভট্টাচার্য, তাঁর যে-কোনও কাজের সঙ্গেই, যে ধরনের মিউজিক্যাল ট্রিটমেন্ট করে থাকেন, তা আসলেই তুখোড়। তাই কাজী নজরুল ইসলাম বা অতুল প্রসাদের গান যেমন ব্যবহার হয়েছে এই সিরিজে, তেমনই ব্যবহার হয়েছে ঋতম সেনের গান। তেমনই ইমন চক্রবর্তীর পাশাপাশি চক্রপাণি দেব বা তিতাস ভ্রমর সেনের কণ্ঠে গান শুনে হুহু করে উঠেছে বুক।

 
এতদূর আসার পরে, বলতে হয় শুভশ্রী গাঙ্গুলির কথা। ইন্দুবালা মল্লিকের চরিত্রে দিব্যি মানিয়েছে তাঁকে। অভিনয়ও মন্দ করেননি। তবে বৃদ্ধ বয়সের ইন্দুবালার সঙ্গে দর্শকের মানিয়ে নিতে বেগ পেতে হবে। বিশেষত, কিছু উচ্চারণগত ত্রুটি কানে লাগে। ইন্দুবালার স্বামী, রতনলাল মল্লিকের চরিত্রে প্রতীক দত্তের অভিনয় চলনসই। তবে যাঁর কথা বলতেই হয়, তিনি স্নেহা চ্যাটার্জি। ইন্দুবালার সই, লছমীর চরিত্রে কী অসামান্য অভিনয় তাঁর! ইন্দুবালা ও লছমী, দুই আদরের সই, ভিন্ন শিকড়, ভিন্ন ভাষা, তবু কী যে টান! এ যেন আচমকাই তৈরি হয়ে যায়। বৃষ্টিবাহিত সম্পর্ক যেন! দুজনেই বৃষ্টির কাছে হাত পেতে কী যে ছুঁতে চায়।

 
উপন্যাস তো বটেই, এই সিরিজজুড়েই রয়েছে সেই বৃষ্টির গন্ধ। ঝড়ের গন্ধ। আছে, আম কুড়োনোর উচ্ছ্বাস। এক অদৃশ্য চালধোওয়া হাতের স্পর্শ। কচুবাটার স্বাদ। কুমড়ো ফুলের সহজ রঙ। আর একটু অতিরিক্ত আবেগ। কিছু অপ্রয়োজনীয় সিকোয়েন্স।

 
আবেগ ছাপিয়ে, ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ কতটা গতি পেল, বাঙালির ‘ফিল গুড’ লাইন থেকে সরে এসে কতখানি বিদ্রোহ করল একা ইন্দুবালা এবং এই সিরিজ— তার জন্য থাকবে অপেক্ষা। যেমন অপেক্ষা করত ইন্দুবালা। পদ্মায় ভাসিয়ে দেওয়া আমতেলের শিশি একদিন ঠিক ভেসে উঠবে ছেনু মিত্তির লেনের কুয়োয়।

পাঠ: শৌণক সান্যাল



Web Title:

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল রিভিউ | Indubala Bhater Hotel Review in Bangla | Subhasree Ganguly | Indubala Bhater Hotel Bengali Web Series

(Bengali podcast on Eisamay Gold)

গল্প রেট করুন