গোটা পশ্চিমবঙ্গে তার মতো শ’তিনেক লোক আছে ধারণা তারকবাবুর। ছেলেবেলায় পায়রা কিনতে গেছিলেন গ্যালিফ স্ট্রিটে। তারপর প্রতি রোববার। সে সময় এমনকি চিতাবাঘের বাচ্চাও পাওয়া যেত। রাশিয়া থেকে সোনালি ইগল আসতো। মায়ানমারের পাইথন আর নেপালের তরাই থেকে ধরা ছোটো হরিণের বাচ্চা কোলে তাঁর সাদা-কালো ছবিও আছে। বাড়িতে একটা চিড়িয়াখানাই বানিয়ে ফেলেছিলেন টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে। হরিণ বা বাঘ কেনার পয়সা অবশ্য ছিল না। বাবা মাঝেমাঝেই লাথি মেরে সব খাঁচা পাচিলের ওপারে ফেলে দিতেন বলে সে সব কেনার কথা ভাবেনওনি কোনওদিন। তবে একদিন একটা বুদ্ধি মাথায় এল। স্কুলের ল্যাব অ্যাসিস্টান্টকে ধরে ইঁদুর, ব্যাং ইত্যাদি সাপ্লাই দেওয়া শুরু করেন। তখন স্কুল ফাইনাল পাশ করেছেন। অভাবের সংসারে সকলে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিল। হেডমাস্টার মশাই বলেছিলেন, ‘ভালোই তো, নিজের পায়ে দাঁড়া। বাবা আর কদ্দিন?’
বাবা সত্যিই বেশিদিন বাঁচলেন না। মেজদা খানিকটা টাকা লগ্নি করেছিল। তারপর গোটা সময়টাই দিয়ে দিল ছোটোভাইয়ের ব্যবসায়। বাড়িতে সকলে খুব ঠাট্টা করতো ওকে নিয়ে। তারপর বোনদের বিয়ে, তেতলা বাড়ি, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা— সবই ব্যাং বিক্রির পয়সায়। এখনও নিয়মিত হাজিরা দেন গ্যালিফ স্ট্রিটে। তবে পাখি, রঙিন মাছের ব্যবসা করেননি কখনও। ওটা অন্য লাইন। ফ্যান্সি শখের ব্যপার। তার কাজের সঙ্গে বিজ্ঞান, গবেষণার যোগ। সিরিয়াস ব্যপার। পড়াশোনা, গবেষণা ইত্যাদিতে তারও খানিকটা যোগদান আছে, এইটি নিয়ে স্কুল পাশ এই লোকটির গর্বের সীমা নেই। করোনা সংক্রমণের সময় বাদুড়, চামচিকের অর্ডার পেয়েছিলেন পুনা, ভাইজাগ থেকে। হাসি মুখে গল্প বলতে বলতেই ক্যারিয়ারে ইঁদুরের খাঁচাগুলো টাইট করে বেঁধে নিলেন তারকবাবু। সামনের ক্যারিয়ারে একটা মোটকা পার্শিয়ান ক্যাট আড়চোখে বাক্সগুলো দেখছিলো। ‘আজকাল আর বেশি খাটতে পারি না’, বলে সাইকেল চালিয়ে গরমের দুপুরে বেড়িয়ে পড়ল আশির কাছাকাছি লোকটা। এই শহরের সবচাইতে বয়ষ্ক ‘জানোয়ার সাপ্লায়ার’।
কন্ঠ: অবর্ণা রায়
Eisamay Gold/good life/job is to supply animals by cycling