কার গান শুনতে পথ আটকালেন স্বয়ং Maa Kali?

fontIcon
Maa Kali
08 Nov 2023, 08:28:38 AM IST
Image Source: iStock

  • মাকে গান শোনাবেন, খুব তাড়া
  • প্রায় দৌড়ে গঙ্গা স্নানে যাচ্ছিলেন সাধক রামপ্রসাদ।
  • পথ আটকালো এক শ্যামবর্ণ মেয়ে, কোমর পর্যন্ত কোঁচকানো চুল, টানা টানা চোখ
  • আবদার, রামপ্রসাদের কাছে গান শুনবে সে। তার পর?

সেদিন অনেকটাই বেলা হয়ে গিয়েছে। মা’এর ভোগ দিতে হবে, মা’কে গান শোনাতে হবে... প্রায় দৌড়তে দৌড়তে গঙ্গায় স্নান করতে যাচ্ছিলেন কালীসাধক রামপ্রসাদ। গঙ্গার ঘাটের একটু আগেই একটি শ্যামবর্ণ মেয়ে তাঁর পথ আটকে দাঁড়ালো। কোমর পর্যন্ত কোঁচকানো ঘন কালো চুল, টানা টানা চোখ... খানিকটা আবদারের সুরেই সে বললো, ‘শোনো না...সবাই বলে তুমি নাকি খুব ভালো গান করো, আমাকে একটা গান শোনাবে...?’। রামপ্রসাদের তখন দম ফেলার সময় নেই, তিনি মেয়েটিকে অনুরোধের সুরে বললেন, ‘মা... আজ আমার খুব তাড়া রয়েছে, মা’এর পুজো বাকি আছে...তুমি বরং আমার বাড়িতে এসো, আমি মা’এর পুজো শেষ করেই তোমাকে গান শোনাব’। মেয়েটি খিল খিল করে হেসে উঠে বললো, ‘ তোমার মা কে গো ?’ রামপ্রসাদ বলেলেন, ‘শ্যামা মা... আমাদের সবার মা... কালী’।


‘ও তাহলে কালী ঠাকুরকে গান শুনিয়ে তারপর আমাকে শোনাবে ? এখন শোনাবে না ? আচ্ছা, ঠিক আছে, তুমি যাও... আমি কিন্তু ঠিক তোমার গান শুনতে যাব’।
রামপ্রসাদ আর দাঁড়ালেন না, তার হাতে আর একটুও সময় নেই। একপ্রকার দৌড়তে দৌড়তে গঙ্গাস্নান শেষ করে বাড়ি ফিরে শ্যামাপুজোয় বসলেন রামপ্রসাদ।
পুজো করতে করতে তিনি নিজেকে হারিয়ে ফেলতেন, ওই সময় শ্যামা মা’এর সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ হত তার। মা যেন সত্যি সত্যিই তাঁর সামনে এসে তাঁর পুজো গ্রহণ করতেন, তাঁর গান শুনতেন। রামপ্রসাদ চোখ বুজে গান ধরলেন......
‘মন তোর এত ভাবনা কেনে ?


একবার কালী বলে বস রে ধ্যানে...
জাঁকজমকে করলে পুজা অহংকার হয় মনে মনে,
তুমি লুকিয়ে তারে করবে পুজা, জানবে না রে জগজ্জনে’।


গানের সুরে একাত্ম হয়ে সাধক যেন তখন সাধনায় আত্মমগ্ন, যে সাধনার পুস্পার্ঘ্য হলো তাঁর সঙ্গীত, কিন্তু গানে বিভোর রামপ্রসাদ এ কি দেখছেন ! তাঁর নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি, হঠাৎই গান থামিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন... তাঁর চোখের সামনে মৃন্ময়ী শ্যামা মা, চিন্ময়ী রুপ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। গঙ্গার ঘাটে দেখা হওয়া সেই মেয়েটিই তন্ময় হয়ে তাঁর গান শুনছে। মেয়েটি যেন তাকে বলছে, ‘ কি রে... গান কর, আমি তো তোর গান শুনতেই এসেছি’।


রামপ্রসাদ’এর চোখ দিয়ে তখন ঝরঝর করে জল পড়ছে... হাত জোড় করে তিনি মা’কে বললেন, ‘মা... আমি তোমাকে চিনতে পারি নি, গঙ্গার ঘাটে তুমিই আ্মার পথ আটকেছিলে, তুমিই আমার গান শুনতে চেয়েছিলে...শোনাব মা, আজ আমি তোমাকে অনেক গান শোনাব’। রামপ্রসাদ গাইলেন...


‘মা তোমারে বারে বারে জানাব আর দুঃখ কত ভাসিতেছি দিবানিশি দুঃখ-নীরে স্রোতের শ্যাওলার মতো ’।


সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে মাতৃ সাধনার এই অসাধারণ দৃষ্টান্ত পৃথিবীতেই বিরল। রামপ্রসাদের এই সঙ্গীত শুধুমাত্র ভক্তিভাবের প্রকাশ মাধ্যম ছিল না, এই সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলা ভাষাকে উজ্জ্বল করার সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গালির সংস্কৃতিকেও সমৃদ্ধ করেছেন। শুধুমাত্র হালিশহরের মানুষ নয় বাংলার জনগণ তাঁর গানের সুরে দুলে উঠেছিল, গলা মিলিয়েছিল তাঁর সঙ্গীতে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে তাঁর রাজসভায় স্থান দিতে চাইলেও তিনি সবিনয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন কারন সাধক রামপ্রসাদের জীবনে প্রথম ও শেষ কথা ছিলেন তাঁর শ্যামা মা। তাঁর ও শ্যামা মা’এর মাঝখানে রাজা,জমিদার, বিষয় আশায় বা কাশী বারানসীও তুচ্ছ হয়ে যেত। একবার সাধক রামপ্রসাদের ইচ্ছে হলো, তিনি বারানসীর ঘাটে বসে মা অন্নপূর্ণাকে গান শুনিয়ে আসবেন। দেরি না করে কাশি-বারানসির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। যাত্রাপথে ত্রিবেণীর ঘাটে বিশ্রাম, সেখানেই গঙ্গার ধারে বসে উদাত্ত গলায় গান ধরলেন। কিছুক্ষন পর হঠাৎই তাঁর কানের কাছে একটা নারীকন্ঠ বলে উঠলো... ‘ওরে আমাকে গান শোনানোর জন্য তোকে কাশিতে আসতে হচ্ছে ? আমি তো ভক্তের হৃদয়েই থাকি, একবার অন্তরাত্মার দিকে তাকিয়ে দেখ, দেখবি ওখানেই বসে আমি তোর গান শুনছি’। আর সময় নষ্ট করলেন না রামপ্রসাদ। ত্রিবেণী থেকেই হালিশহরে ফিরে এলেন তৈরি করলেন সেই চিরস্মরণীয় গান...


‘আর কাজ কি আমার কাশি
মায়ের পদতলে পড়ে আছে
গয়া, গঙ্গা, বারানসী’।।


কন্ঠ: রূপসা রায় 


Web Title:

Kali Puja Special | Maa Kali | Ramprasad Sen Myth | রামপ্রসাদ সেন | সামনে মা কালী

(Bengali podcast on Eisamay Gold)

গল্প রেট করুন