Lalon Fakir Death Anniversary: জাত গেল জাত গেল... কেন লিখছেন?

fontIcon
Lalon
16 Oct 2023, 11:50:58 AM IST
Image Source: BCCL

  • এক দিন অনেক পথ হেঁটে আসছে Lalon Fakir
  • পথে পড়ল একটা নিরিবিলি গ্রাম
  • গ্রামের শেষে স্মৃতিরত্ন মহাশয়ের টোল
  • ক্লান্ত লালন ঢুকলেন সেখানে
  • চমকে উঠলেন স্মৃতিরত্ন। তার পর?

নদিয়ার কুমড়োখালি গ্রামের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে তখন সাধক, ফকির, সন্ন্যাসীদের অবাধ বিচরণ। দূর দূর থেকে নামী-অনামী সাধকরা এখানে আসতেন। শাস্ত্র, তন্ত্র এবং অধ্যাত্ম দর্শন নিয়ে আলোচনা চলত। সাধারণ ভক্তরা সেই আলোচনা শুনে সমৃদ্ধ হতেন।


সেই সময় কুমড়োখালির পাশের গ্রামেই থাকতেন প্রখ্যাত সাধক লালন ফকির। মাঝে মাঝেই তিনি এই সর্বমঙ্গলা মন্দিরে চলে আসতেন। এখানকার পরিবেশ তাঁর খুব ভালো লাগত, তা ছাড়া সর্বমঙ্গলা মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহাসাধক তন্ত্রাচার্য শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব, যিনি ছিলেন লালন ফকিরের বন্ধু। বয়সে বড় হলেও লালন ফকির তন্ত্রাচার্যকে দাদাঠাকুর বলে ডাকতেন।

একদিন লালন ফকির অনেক দূর থেকে কুমড়োখালির সর্বমঙ্গলা মন্দিরে আসছেন। গ্রামের সীমানায় স্মৃতিরত্ন মহাশয়ের টোল। পথশ্রমে ক্লান্ত ফকির একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য স্মৃতিরত্ন মহাশয়ের টোলে ঢুকলেন। পণ্ডিতমশাই ঘরের এককোণে বসে চোখ বুজিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ধূমপান করছিলেন। তাই ফকিরকে নজর করলেন না। ফকির ঘরে ঢুকে যেই বসতে যাবেন, তখনই স্মৃতিরত্ন তাঁকে দেখতে পেয়ে উঠে দাঁড়ালেন। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে হাতের হুঁকোটা উপুড় করে সব জল ফেলে দিলেন।

লালন ফকির বুঝতে পারলেন, হিন্দু ব্রাহ্মণের ঘরে মুসলমান ঢুকে পড়ার ফলে স্মৃতিরত্নের জাত, কুল, মান সব চলে গেল। মনে মনে কষ্ট পেলেও ফকির মুখে কিছু বললেন না। ধীর পায়ে টোল থেকে বেরিয়ে গেলেন।

কিছুক্ষণ পরেই তিনি তাঁর গন্তব্য সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পৌঁছলেন। দূর থেকে তন্ত্রাচার্য শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব তাঁকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এসে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন। কোনও কথা না বলে সেখানে দাঁড়িয়েই লালন ফকির তৈরি করলেন সেই অবিস্মরণীয় গান, যে সেই গান আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে –

সবে বলে লালন ফকির হিন্দু কি যবন ?

লালন বলে আমার আমি না জানি সন্ধান

এক ঘাটেতে আসা যাওয়া, এক পাটনী দিচ্ছে খেওয়া

তবুও কেউ খায় না কারও ছোঁয়া

ভিন্ন জল কোথাতে পান?

গান শেষ করার পর শিবচন্দ্র বললেন, ‘ফকির তুমি তো সিদ্ধ পুরুষ, তোমার আবার জাত কী? ঈশ্বর আর তাঁর সৃষ্টি – এই দুইই তো তোমার চোখে একাকার হয়ে গেছে’।

লালন বললেন, ‘দাদাঠাকুর, মানুষের মণিকোঠায় যিনি বসে আছেন তিনি যে সকলের, সকলেই তো তাঁর। এই সাদামাটা কথাটা কেউ বোঝে না বলেই তো যত গোল’।

চারদিকে তখন ভক্ত, শিষ্য, সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ছে। সকলেই লালন ফকিরের গান শোনার জন্য উৎসুক। লালন ফকিরও তখন ভাবে বিহ্বল, তাঁর মনের মানুষ তন্ত্রাচার্য শিবচন্দ্রকে পেয়ে ফকির যেন সুরের আবেশে মোহিত হয়ে গিয়েছেন...



একতারার তারে সুরের ঝংকার তুলে লালন ফকির আবার গান ধরলেন –

‘ভক্ত কবীর জাতে জোলা, প্রেম ভক্তিতে মাতোয়ালা।

ধরেছে সে ব্রজের কালা, দিয়ে সর্বস্ব তার’।

গানের গায়কি ও সুর উচ্চমানের হলেও ফকিরের গানের কথা উপস্থিত অনেকেরই পছন্দ হচ্ছিল না। বেশ কয়েকজন গোঁড়া ব্রাহ্মণ পণ্ডিত লালন ফকিরের গানের কথার প্রতিবাদ জানালেন। তাঁরা শিবচন্দ্রকে বললেন, ‘আমরা শুনেছি, পণ্ডিত স্মৃতিরত্ন ফকিরকে দেখে তার হুঁকোর জল ফেলে দিয়েছেন, সেই কারণেই ফকির এই সব অনাসৃষ্টির গান বাঁধছেন। কিন্তু পণ্ডিত যেটা করেছেন সেটাতে অন্যায় কোথায়? আচার বিচার সব লোপ পেলে হিন্দু ধর্ম যে উচ্ছন্নে যাবে! আপনি বলুন আচার্য, আপনার পবিত্র সর্বমঙ্গলা আশ্রমে এই অনাচার কি ঠিক’ ?

শিবচন্দ্র উত্তর দেওয়ার আগেই লালন ফকির গেয়ে উঠলেন আর এক ঐতিহাসিক গান, যে গান জনমানসে আজও জনপ্রিয় –

‘ধর্ম-প্রভু জগন্নাথ
চায়না রে সে জাত অজাত
ভক্তের অধীন সে রে।
যত জাতবিচারী দূরাচারী
যায় তারা সব দূর হয়ে
লালন কয়, জাত হাতে পেলে
পুড়াতাম আগুন দিয়ে রে’।

লালনের গানে সত্যি সত্যিই সেখানে যেন আগুন জ্বলে উঠল। উপস্থিত গোঁড়া ব্রাহ্মণরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। এক মুসলমান ফকির হিন্দু গ্রামের হিন্দু মন্দিরে এসে এ সব কী বলছেন ? এত বড়ো আস্পর্ধা ? এর একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। ব্রাহ্মণরা উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ফকিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করলেন।

এ সময় শিবচন্দ্র উঠে দাঁড়িয়ে ধমক দিয়ে সবাইকে বসালেন, তারপর বললেন, ‘দেখো জীবনের চলার পথে যত ভেদ বিভেদ থাকুক না কেন আসলে অন্তরে সব এক। হিন্দু, মুসলমান বা অন্য সব ধর্মই সেই পরম সত্যের কথা বলছে, যে সত্য অদ্বিতীয় – অসীম। তা হলে বৃথা কেন এত বাদবিবাদ’?

এর পর বেদ, উপনিষদে ব্রহ্মদর্শন সম্পর্কে বক্তব্য ব্যাখ্যা করে সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন এই পৃথিবীতে সব তত্ত্বই আসলে ব্রহ্মের অভিমুখে ধাবমান। শিবচন্দ্রের কথা শুনে ব্রাহ্মণরা নীরব হয়ে গেল।

লালন ফকিরের চোখে তখন জল, তিনি বললেন, ‘দাদাঠাকুর, পাহাড়ের ওপরে উঠে গেলে নীচের সবকিছু সমান দেখা যায়, তোমার তাই হয়েছে’।

শিবচন্দ্র লালন ফকিরকে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘এক ব্রহ্ম...দ্বিতীয় নাস্তি’।

Web Title:

বাউল সম্রাট লালন ফকির,Lalan Fakir history ,Lalan Fakir ,Lalon fakir biography in Bengali,Fakir Lalon Shah Biography

(Bengali podcast on Eisamay Gold)

গল্প রেট করুন