আরও শুনুন বা পড়ুন
Karna Pishachini : Sex মাস্ট, কিন্তু বীর্যপাত হলেই মৃত্যু…কর্ণপিশাচিনীর গল্প
What is Karna Pishachini : কর্ণপিশাচিনী সাধককে কানে কানে জানায়, সে যৌনসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। যৌন কামনায় বশীভূত হয় সাধক। পিশাচিনীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয় সে। যতক্ষণ না পিশাচিনী তৃপ্ত হচ্ছে, ততক্ষণ চলবে সঙ্গম। বোঝাই যাচ্ছে, এমন ভয়ানক পিশাচিনী যখন, তাকে তো আর শরীরী সুখ দেওয়া সহজ কাজ নয়। ফলে, সাধকের জীবনীশক্তি নিংড়ে নিতে থাকে এই যৌনক্রীড়া। আর সাধকের শরীর ধীরে ধীরে শেষ হতে থাকে। সাধক ক্লান্ত হয়ে পড়লেই বিপদ! পিশাচিনীর তৃষ্ণা আরও বেড়ে যায়। সমানে চলতে থাকে কানে ফিসফিস করা। আরও আরও বেশি করে যৌনতার দাবি জানাতে থাকে সে। এই চক্র থেকে সহজে মুক্তি মেলে না। কথা বলা কিছুতেই বন্ধ করে না পিশাচিনী। আর সাধক ক্রমে ঘোরের মধ্যে চলে যায়। ক্রমে সমাজবহির্ভূত হয়ে পড়ে। সারা দিন তখন সে খালি কানে কানে বলা কথা শুনে চলে।
তবে যে সাধক যৌনশক্তিতে সবল এবং বুদ্ধিমান, সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ভয়াল এই পিশাচিনীকে। তাকে তৃপ্ত করে নিজের সব কাজ হাসিল করে আর তার পরেই বিসর্জন দেয় পিশাচিনীকে। আসলে পিশাচিনীকে বশে রাখতে না পারলে সে সাধকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কর্ণপিশাচিনী সাধনার সময়ে সাধকের সারা শরীর কালো হয়ে যায়। উন্মাদ হতে শুরু করে সে। যদি সাধকের স্ত্রী বা কোনও সঙ্গিনী থাকেন, তবে তাঁকে মেরে ফেলে কর্ণপিশাচিনী।
কর্ণপিশাচিনীর সঙ্গে সঙ্গমের সময়ে বীর্যপাত কিন্তু সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রে বীর্যপাত মানে নিশ্চিত মৃত্যু। এই সময়ে সাধকের বীর্যপাত হলে পিশাচিনী তার সামনে নিজের মাথা কেটে ফেলে। তার পর এমন সব দৃশ্য দেখাতে শুরু করে যে, সাধক এক সময়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
আর সফল হলে সাধক কিন্তু সর্বজ্ঞ হয়ে ওঠে। সামনে দাঁড়ানো কোনও ব্যক্তি এই মুহূর্তে ঠিক কী ভাবছে, কী করতে চলেছে, অতীতে কী করেছিল— সব সাধককে কানে কানে জানিয়ে দেয় পিশাচিনী। অথবা সাধককে কেউ কোনও প্রশ্ন করতে চাইলে আগেই সেই প্রশ্ন এবং উত্তর কানে কানে পিশাচিনী জানিয়ে দেয়। কারও নাম-পরিচয় এবং কী উদ্দেশ্য নিয়ে সে এসেছে, সব আগেই জানতে পেরে যান সাধক। ফলে, জ্যোতিষীদের ব্যবসায় এই সাধনা অত্যন্ত গুরুত্ব পায়। আসলে রুদ্রযামলে উল্লিখিত এই কর্ণপিশাচিনী হলো এক ধরনের উপদেবী। যে দেবত্ব পায়নি, অথচ বেশ কিছু অলৌকিক শক্তির অধিকারী। আবার ভূত-প্রেতের মতো এরা অপদেবতাও নয়।
কর্ণপিশাচিনীর বর্ণনায় বলা হয়েছে, ইনি কৃষ্ণবর্ণ। ত্রিনয়ন রক্তাভ। এরা আকারে ছোট কিন্তু এদের উদর বৃহৎ আর জিব অরুণবর্ণ। এদের চার হাত। তার মধ্যে দুই হাতে খুলি। এদের শরীর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। বলা হয়, কর্ণপিশাচিনী শবহৃদয়ে বাস করে। কথিত আছে, এই দেবীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বেদব্যাস। কর্ণপিশাচিনী সাধনার ফল দু’রকম হতে পারে। হয় সিদ্ধিলাভ, নয়তো মৃত্যু। কর্ণপিশাচিনীর কথা গুপ্ত রাখতে হয় সাধককে। সামান্য ভুলত্রুটিতেই হতে পারে সর্বনাশ।
তন্ত্রে কর্ণপিশাচিনী সাধনাকে নিম্নমানের সাধনা বলা হয়েছে। তবে অনেকগুলি পিশাচমন্ত্রে সিদ্ধ হওয়ার পর তবেই কর্ণপিশাচিনী সাধনা করা যায়। তন্ত্রচর্চাকারীদের মতে, যক্ষ্মিণী, ভুলো, কানাওয়ালাদের ‘গুরু মা’ বলা যেতে পারে কর্ণপিশাচিনীকে। অর্থাৎ নিম্নমার্গের হলেও পিশাচতন্ত্রের সর্বোচ্চ সাধনা এটি। তাই, বেশ কিছু জটিল পিশাচ মন্ত্রে সিদ্ধ হওয়ার পর সাধক কর্ণপিশাচিনী সাধনার যোগ্য হন। তবে মূল কর্ণপিশাচিনী সাধনা মূলত ২১ দিনের। এই ২১ দিন ধরে শ্মশানে বা কোনও বিশেষ ঘরকে সাধনক্ষেত্র বানিয়ে সাধনা করতে হয়। এই ২১ দিন এই ঘর ছেড়ে বেরতে পারবে না সাধক। এমনকী, শৌচালয়ে যাওয়ারও অনুমতি নেই। সাধনক্ষেত্রেই মলমূত্র ত্যাগ করতে হয়। শুধু তা-ই নয়, শরীর এই বর্জ্যপদার্থ কাজে লাগাতে হয় সাধনায়।
অর্থাৎ, অপরিচ্ছন্নতা এই সাধনার অন্যতম উপাদান। স্নান করা বা নিজেকে সাফসুতরো রাখার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। বরং, এই ২১ দিন নিজের প্রস্রাবেই নিজের শরীর ধুয়ে নিতে হয় সাধককে। কানে লাগাতে হয় নিজের বিষ্ঠা আর শ্মশান থেকে জোগাড় করা ছাই। তেল বা ঘি-এর প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্ত্র সাধনা করতে হয়। মন্ত্রোচ্চারণের সময়ে হাতের আঙুলগুলি তেলে ডুবিয়ে রাখতে হয়। আর শেষের আগের দিন অর্থাৎ ২০তম দিনে মহিষ বলি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই বলির রক্ত নিজের শরীরে মেখে তার পর কর্ণপিশাচিনীকে আহ্বান জানাতে হয়। এত কিছুর পর ২১ দিনের দিন অমাবস্যার রাতে নাকি সাধকের কাছে আসে কর্ণপিশাচিনী। তার পরেই শুরু হয় কানে ফিসফিস করে কথা বলা।
অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা, ভবিষ্যতের কোটরে কী আছে, সেই জিজ্ঞাসা প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায় মানুষকে। কখনও সে তাড়না হতে পারে প্রাণঘাতীও! অন্ধবিশ্বাস পৌঁছে দেয় উন্মাদনার খাদের ধারে। যেখান থেকে ফেরার পথ থাকে না আর! পড়ে থাকে শুধু ফিসফিস! কানে কানে,নাকি স্রেফ মগজে।
কণ্ঠ: তৃণঞ্জনা দাস
Eisamay Gold/spirituality/sex and the secret of karnapichasini in indian tantra part 2