কেন অম্বার অভিশাপে শেষ ভীষ্ম? - ২

fontIcon
Amba
13 Dec 2023, 07:40:12 PM IST
Image Source: BCCL

  • কাশীরাজের কন্যা অম্বা ও তাঁর দুই দিদিকে হরণ করলেন ভীষ্ম
  • ভাই বিচিত্রবীর্যের জন্য এ কাজ করলেন তিনি
  • কিন্তু অম্বারও ছিল এক প্রেমিক, তাই তিনি বিয়ে চাইলেন না
  • ভীষ্মও ছেড়ে দিলেন অম্বাকে
  • কিন্তু প্রেমিকের কাছে আশ্রয় মিলল না অম্বার। কী হল তার পর? আজ দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব

আরও শুনুন বা পড়ুন: প্রেম নেই, সংসার নেই, অম্বার শুধু প্রতিশোধ!

প্রত্যাখ্যাত, পরিত্যক্ত অম্বা ক্রমশই একা হয়ে যান, ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। নিজের মতো করে সম্মান ফিরে পেতে চাওয়ার লড়াই করা ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনও উপায় থাকে না। আর নিজের সেই পুঞ্জীভূত রাগকে রূপ দেওয়ার জন্যই শুরু হয় তাঁর কঠোরতম তপস্যা। খিদে, ঘুম, বিশ্রাম সমস্ত কিছু ত্যাগ করে চরম শারীরিক কষ্ট সহ্য করে তিনি পৌঁছোতে চান সেই বিন্দুতে যেখানে তাঁর ক্রোধ যেন তাঁর শরীর, মন, মস্তিষ্ক সব কিছুকে মিলিয়ে দিতে পারে।

সফল হলেন অম্বা। বর মিলল স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের কাছ থেকে। পরের জন্মে পুরুষ হয়ে জন্মাবেন তিনি। তাঁর নারীসত্তাটি থাকবে ভিতরে। আর হ্যাঁ, তাঁর হাতেই নিহত হবেন পুরুষশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম!

চিতা সাজালেন অম্বা। নিজের। সেখানে ঝাঁপ দিয়ে এ জন্মটাকে শেষ করতে হবে। পরের জন্ম প্রতিশোধের। ফিরে আসবেন তিনি, পুরুষবেশে নারী হয়ে— তিনি হয়ে উঠবেন না-পুরুষ, না-নারী এক সত্তা। শিখণ্ডী। সে গল্প অন্য। এই জন্মে মৃত্যুতেই তাঁর মুক্তি!

মহাভারতের ভাষ্য বহু। যে গঙ্গা একে একে সাতটি সন্তানকে নদীতে ফেলেছিলেন, অষ্টমগর্ভ ভীষ্মকে যিনি ফেলতে পারেননি স্বামী শান্তনুর বাধায়, মহাভারতের এক আখ্যান বলে, সেই গঙ্গাই যখন জানতে পারেন, পুত্র ভীষ্মের পুত্রর বিনাশ চান অম্বা তখন তাঁর অভিশাপে অম্বার অর্ধেক নদী হয়ে যায়। কী আশ্চর্য, না? এ

কোথাকার জল কোথায় গড়ায়! এক জন নারী হয়েও তিনি অপর এক নারীর সম্পূর্ণ জীবনটা বদলে যাওয়ার জন্য নিজের পুত্রের অপরিণামদর্শিতা বুঝতে পারেন না! নাকি এ নেহাতই কাহিনিকারের বিভ্রম!

Amba TWO BCCL


শিবের বরে পরের জন্মে তিনি জন্মালেন ধ্রুপদ রাজার সন্তান হয়ে। বিরাট যোদ্ধা তিনি। আত্মবিস্মৃত নন। পণ তাঁর একটাই, এ জন্মে ভীষ্মকে বিনাশ করা নিজের হাতে।

আর তাঁর এই বিধ্বংসী প্রতিশোধস্পৃহাই মহাভারতে এমন একটা মুহূর্ত যেখানে ‘পুরুষসুলভ’, ‘নারীসুলভ’— পুরুষ ও নারীর হয়ে ওঠার চিরাচরিত ধাঁচাটি প্রশ্নের মুখে পড়ে। নারী মানেই যে এক ধরনের শারীরিক, মানসিক দুর্বলতাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়, তাকে অস্বীকার করে অম্বা স্রেফ ন্যায় পাওয়ার জন্য এমন এক কঠিন-কঠোর তপস্যায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, যা এই পুরুষতন্ত্রের চেনা কাঠামোকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

পরের জন্মে অম্বা হয়ে ওঠেন শিখণ্ডী। যাঁকে সামনে রেখে ভীষ্মের উপর তির চালিয়ে ছিলেন অর্জুন। তির ছুড়েছিলেন শিখণ্ডীও।

শিখণ্ডীর কি মনে পড়েছিল অম্বার কথা? তাঁর কষ্টের কথা? তাঁর নিজের কথা? তাঁর গতজন্ম বিস্মৃত ছিলেন না সম্ভবত শিখণ্ডী। প্রতিশোধ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শান্তি পেয়েছিলেন কি?

অম্বা থেকে শিখণ্ডী হয়ে ওঠায় প্রাপ্তি ছিল, না অপ্রাপ্তি? পূর্ণতা এসেছিল? সে অন্য এক কাহিনি। মহাভারতের কথা অমৃতসমান। সে গল্প হবে পরে। আজ থাক।


গল্প রেট করুন