Amba Revenge in Mahabharat : অন্যকে মন দিয়েছি আমি। আপনি আমাকে হরণ করছেন দেবব্রত?এর পরও কি আমার অন্য পুরুষে বিবাহ ধর্মসঙ্গত?
দেবব্রত অর্থাৎ ভীষ্ম দু’দণ্ড চুপ। তার পর বললেন, ‘ছেড়ে দিলাম তোমায়। চলে যাও।’
—কিন্তু আজ যদি আপনি হরণ করার পরে আমার প্রেমাস্পদ আমাকে গ্রহণ না করেন?
— ‘তাতে আমার কী করার আছে?’
—যদি রিক্ত হয় আমার জীবন, ফিরে আসব আমি আপনার কাছে, আপনার মৃত্যু হয়ে।
ভীষ্ম ছেড়ে দিলেন অম্বাকে। চলে গেলেন অম্বা। তার পর থেকেই কি অস্বস্তিত্বে পুরুষশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম?
চলুন ফিরে যাই কাশী থেকে হস্তিনাপুরে যাওয়ার সেই পথে।
কাশীরাজের তিন কন্যা। অম্বিকা,অম্বালিকা, অম্বা। সবচেয়ে ছোট অম্বা। মা সত্যবতীকে কথা দিয়েছেন ভীষ্ম, ভাই বিচিত্রবীর্যের জন্য কাশীরাজের তিন কন্যাকেই নিয়ে আসবেন হস্তিনাপুরে, বিচিত্রবীর্যের রানি হবেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই কন্যার জন্য স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করেছেন কাশীরাজ। কিন্তু বিচিত্রবীর্য কি পারবেন, তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিতে! যদি নাও পারেন, তাও চিন্তা নেই। মহাবীর ভীষ্ম, একাই একশো। কোনও স্বয়ংবর সভায় কারও সাথে এঁটে উঠতে পারার দরকার হবে না, বাহুবলে হরণ করবেন তিনি তিন কন্যাকে, বিচিত্রবীর্যের আনন্দের জন্য, ভোগের জন্য।
সেই মতো ভীষ্ম গেলেন। কাশীরাজ বাধা দিলেন তাঁকে— স্বয়ম্বর সভায় যুদ্ধ না! ভীষ্মকে চ্যালেঞ্জ করছেন কাশীরাজ! এত বড় সাহস! হরণই করবেন তিনি। করলেনও। রথে তুললেন তিন কন্যাকে। রথ ছোটালেন হস্তিনাপুরের দিকে।
হঠাৎই!
সবচেয়ে ছোট যে মেয়েটি, অম্বা— বলে উঠলেন ভীষ্মকে— অন্য পুরুষকে মন দিয়েছি আমি! আমাকে হরণ করা কি ধর্মসঙ্গত? ভীষ্ম বললেন, বেশ, চলে যাও তুমি! ছেড়ে দিলাম তোমায়।
অম্বা মুক্ত হলেন। কিন্তু একটা প্রশ্ন উঁকি দিল তাঁরও মনে।
হরণ করা হয়েছে তাঁকে। এর পরেও ফিরে গেলে তাঁকে শুদ্ধ বলে মেনে নেবেন তাঁর প্রেমাস্পদ?
বলে গেলেন তিনি ভীষ্মকে, যদি ফিরিয়ে দেন তাঁর প্রেমাস্পদ, যদি তাঁর জীবন হয়ে যায় রিক্ত, শুষ্ক— তা হলে তার জন্য দায়ী থাকবেন ভীষ্ম। আর প্রতিশোধ তিনি নেবেনই। ভীষ্ম যে পৌরুষের ধ্বজাধারী, সবচেয়ে তুচ্ছজ্ঞান করেন যে পৌরুষহীন পুরুষকে— সেই হবে তাঁর কাল।
লিঙ্গ পরিচিতির লড়াইটা নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের যে কতটা কঠিন হতে পারে, মহাকাব্যের পাঠেও স্পষ্ট হয়ে যায় বারেবারে। বিশেষত নারীর অবস্থান নিয়ে সেখানে বারেবারেই প্রশ্ন ওঠে। প্রধান নারীচরিত্রদের পাশে উপেক্ষিতা রয়ে যান যাঁরা তাঁরা সব সময়েই বঞ্চিত, শোষিত, অবহেলিত নারীদের প্রতিচ্ছবি। অবশ্য এই উপেক্ষার জবাব তাঁরা দিয়েছেন কোনও কোনও সময়ে প্রতিশোধে, ফিরিয়ে দেওয়া অপমানে।
অম্বাও তেমন। যেমন বলেছিলেন, ঠিক তেমনই করেছেন। নিজের সম্মান ও আত্মপরিচয় ও প্রেমের স্বীকৃতির জন্য একজন নারী কতদূর পর্যন্ত যেতে পারেন এবং সমাজই বা তাঁকে কী চোখে দেখে তারই সাক্ষ্য হয়ে ওঠেন তিনি। অথচ তাঁর প্রতিশোধস্পৃহা ও নিজের সম্মান ফিরে পাওয়ার লড়াইটা কতটা নন্দিত আর কতটা নিন্দিত সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। যেন একজন প্রত্যাখ্যাত নারীর রেগে ওঠার, প্রতিশোধ নিতে চাওয়ার ইচ্ছেটা ঠিক ‘নারীসুলভ’ অভিমানের চিরাচরিত ছবির সঙ্গে যায় না। যেন অম্বার এই ক্রোধ সঠিক নয়, নারীর স্বভাবসিদ্ধ নয় এভাবেই চিহ্নিত হয়ে রইল।
চলুন ফিরি সেই কাহিনিতে। অম্বার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল শাল্ব রাজ্যের রাজার। ভীষ্মের কাছে যখন মুক্তি চাইলেন, হয়তো নিজের পুরুষ সত্তাকে তৃপ্ত করার জন্যই ভীষ্ম ছাড় দিলেন তাঁকে। কিন্তু অম্বার সন্দেহ অর্থহীন ছিল না। হৃতা নারীকে প্রত্যাখ্যানই করলেন প্রেমিকপ্রবর।
এ বার কী করবেন অম্বা!
প্রথমে ফিরে এলেন ভীষ্মের কাছে। বিয়ে করুন তাঁকে দেবব্রত! যাঁর কারণে তাঁর এই অবস্থা!
কিন্তু বৃথা অনুরোধ নারী!
ব্রহ্মচর্যের ভীষণ প্রতিজ্ঞা তাঁর। তিনি ভীষ্ম। দেবতারা পুষ্পবৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতিজ্ঞায়। তিনি আজ কি না এক তুচ্ছ নারীর কথা ভেবে তাঁর সেই প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করবেন! হয়? হয়েছে কখনও?
Web Title:
Amba Revenge,Amba Revenge in Mahabharat,Hindu Mythology Mahabharat ,Story of princess Amba Revenge,princess Amba Revenge Against Bhisma