Ganesh Chaturthi 2023: বছরে দু’বার জন্মদিন গণেশের... কেন?

fontIcon
Ganesh 1
18 Sep 2023, 05:37:59 PM IST
Image Source: iStock

  • ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে গণেশের জন্ম
  • সে দিনেই দেশের বেশিরভাগ অংশে গণেশ পুজো হয়
  • কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী, গণেশের জন্ম মাঘ মাসে
  • তাই মাঘ মাসের শুক্লাচতুর্থীতেও গণেশ পুজোর চল আছে
  • এ বার বুধবার গণেশ পুজো বলে শুভ, কিন্তু চাঁদ দেখায় নিষেধও আছে


Unknown Story of Ganesh Puja : সারা ভারতবর্ষ জুড়ে জোর কদমে চলছে গণেশ উৎসবের প্রস্তুতি। সনাতন ধর্ম ও শাস্ত্রানুযায়ী সমস্ত দেবতার আরাধনার পূর্বে পূজা করা হয় গণেশজীর। সমস্ত মঙ্গলজনক কাজের শুরু হয় গণেশেরই হাত ধরে। কিন্তু কী কারণে চলে এই রীতি?

পুরাণ অনুসারে একদা ত্রিভুবন পরিক্রমার প্রতিযোগিতা হয় কার্তিক ও গণেশের মধ্যে। প্রতিযোগিতার শর্ত ছিল যে আগে ত্রিভুবন পরিক্রমা করে শিব পার্বতীর কাছে ফিরে আসবেন তাঁকে অমরত্ব ও জ্ঞানভাণ্ডার দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। কার্তিক তরিঘড়ি বাহন ময়ূরে চেপে ত্রিভুবনের পরিক্রমায় পাড়ি দেন। অন্য দিকে, গণেশ শিব-পার্বতীকে পরিক্রমণ করে তাঁদের প্রণাম করে জানালেন, তাঁর ত্রিভুবন পরিক্রমা সম্পূর্ণ; কারণ মা-বাবাই তাঁর কাছে ত্রিভুবন। মুগ্ধ হন হর-গৌরী। বাবা মায়ের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা দেখে শিব-পার্বতী তাঁকে আশীর্বাদ প্রদান করেন যে, আজ থেকে যে কোন পূজায় সর্বাগ্রে গণপতি পূজিত হবেন।

শাস্ত্র মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে গণেশের জন্ম। চতুর্থীকে জ্যোতিষশাস্ত্রে রিক্তা তিথি বলে গণ্য করা হয়, এই তিথিতে কোনও শুভকর্ম হয় না। কিন্তু এই চতুর্থী তিথিটি গণেশের জন্মদিন বলে এই দিন রিক্তা তিথির দোষ গ্রাহ্য হয় না; সকল শুভ কাজ করা যায়।

গণেশের কুষ্ঠিতে লগ্নে বৃশ্চিক রাশি ও মঙ্গল বিরাজ করায় তিনি মঙ্গলমূর্তি। পৃথিবীর দক্ষিণায়নের শুরুতে আসে ঝুলন যাত্রা, রাখী পূর্ণিমা তারপর। তারপর ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের গণেশচতুর্থী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় গণেশোৎসব; আবার উত্তরায়ণের সূচনায় প্রথমে মাঘ মাসের শুক্লা চতুর্থী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় গণেশের জন্ম তিথি উপলক্ষে বিনায়ক চতুর্থীর পূজা, তারপর আসে সরস্বতী পূজা, দোলযাত্রা। শিব পুরাণে বর্ণিত কাহিনী থেকে জানা যায়, একদা শিব পার্বতীর বিবাহের কিছুকাল পরে মহাদেব একা নিকটস্থ বনে ভ্রমণ করতে যান। এই সময় পার্বতী একটি সুন্দর বালকের মূর্তি গড়েন এবং ঐ পতুল বালকটির উপর বাৎসল্য অনুভব করায় পরম স্নেহে প্রাণদান করে পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। পুত্রের নাম রাখেন বিনায়ক। অর্থাৎ পরম বিনয়ী ও সততার প্রতীক। ‘কাউকে অন্দরে প্রবেশ করতে দেবে না’- এই বলে পার্বতী তাঁর এই আজ্ঞাকারী পুত্রকে দরজার সামনে পাহাড়ায় বসিয়ে স্নানে যান। কিছুক্ষণ পরে মহাদেব ভ্রমণ শেষে গৃহে প্রবেশ করতে গেলে পার্বতীপুত্র তাঁকে চিনতে না পেরে প্রবেশে বাধা দেন। মাতৃআজ্ঞা পালন করতে গিয়ে বিনায়ক স্বয়ং মহাদেবের কাছে বিনয়ের সীমা লঙ্ঘন করে বসেন। ফলে ক্রোধিত হয়ে মহাদেব উদ্ধত বালকের শিরোচ্ছেদ করেন। অতঃপর পার্বতী এই মর্মান্তিক পরিণামের কথা শুনে দ্বাররক্ষক বিনায়কের পরিচয় দেন এবং তার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মহাদেবের কাছে অনুরোধ করতে থাকেন। অবশেষে মহাদেব নিজের ভুল বুঝতে পেরে পার্বতীকে শান্ত করতে পুত্রের শিরে হাতির মাথা বসিয়ে পুনরায় তাকে জীবন ফিরিয়ে দেন।

এই কাহিনি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী তিথিতে গণেশের জন্ম হয়। আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের গণেশ খন্ডের কাহিনি অনুসারে, বিষ্ণুর ইচ্ছায় উমা মহেশ্বরের পুত্র হিসেবে গণেশের জন্ম ভিন্নতর পরিমন্ডলে। এই পুরাণে গণেশ শিবের ঔরসজাত পুত্র, মহাদেব ও পার্বতী উভয়েরই সন্তান। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে পার্বতীর কোল আলো করে গণেশের জন্ম মাঘ মাসের শুক্লা চতুর্থীর দিন। ভাদ্র ও মাঘ উভয় মাসের শুক্লা চতুর্থীই পঞ্জিকাতে ‘গণেশ চতুর্থী’ রূপে উল্লিখিত হয়ে আসছে। তবে কিছু পুরাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, বসন্ত পঞ্চমীর আগে যে শুক্লা চতুর্থী আসে তা আসলে বিনায়কের পুনরাবির্ভাব তিথি।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ রচিত হয়েছিল ও প্রসার করেছিল বঙ্গদেশে। তাই মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমীর আগের দিন গণেশ চতুর্থী বা বিনায়ক চতুর্থী পালিত হয় মূলত পূর্ব ভারতে। অন্য দিকে, বায়ু পূরাণ, বৃহদ্ধর্ম পূরাণ বা শিব পূরাণ দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল তাই ভাদ্রমাসের শুক্লা চতুর্থীতেই গণেশ চতুর্থী উপলক্ষে গণপতি উৎসব উৎযাপন করা হয়। ভাদ্র মাসের গণেশ চতুর্থীই অধিক প্রচলিত জনমানসে এবং গণপতি উৎসব আমাদের অন্যতম প্রধান উৎসব। এই ভাবে উত্তরায়ণ কালে একবার ও দক্ষিণায়ণ কালে একবার নিয়মে আমাদের সবার প্রিয় গণপতি বাপ্পার জন্মদিন বছরে দুই বার পালিত হয়।

ভক্তিভরে গণেশের পূজা করলে মানসিক চাপ ও সমস্ত বাধা বিপত্তি কেটে যায়, জীবনে নেমে আসে সুখ সমৃদ্ধি ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্থী থেকে ওই মাসের অনন্ত চতুর্দশী পর্যন্ত ১০ দিন ভগবান গণেশ পৃথিবীতে অবস্থান করেন বলে লোকবিশ্বাস। চলতি বছর ৩০শে অগস্ট মঙ্গলবার দুপুর ৩.৩৪মিনিটে গণেশ চতুর্থী শুরু হবে। ৩১শে অগস্ট বুধবার দুপুর ৩.২৩ মিনিট পর্যন্ত চতুর্থী থাকবে। শাস্ত্রমতে ৩১ শে অগস্ট বুধবার চতুর্থী তিথি সূর্যোদয় প্রাপ্ত এবং মধ্যাহ্নব্যাপী হওয়ায় ওই দিনই প্রতিমাস্থাপন ও সিদ্ধিবিনায়ক ব্রত পালনের অনুকূল। গণেশ পুরাণে ও শ্রীতত্ত্বনিধি গ্রন্থে বলা হয়েছে বুধবার গণেশের বার; ভাদ্র শুক্লা চতুর্থী তিথিতে বুধবার গণপতির জন্ম হয়। এই বছর গণেশ চতুর্থী বুধবার ও রবি যোগের শুভ প্রেক্ষা যুক্ত। তবে ৩০শে আগস্ট রাতে চতুর্থী তিথি নিশাপ্রাপ্ত হওয়ায় ওই দিনের রাত, কলঙ্ক চতুর্থীর রাত। কথিত আছে গণেশ চতুর্থীতে চন্দ্র দর্শন করতে নেই; করলে গণেশ ক্ষুব্ধ হন। পঞ্জিকা মতে এই দিনের চাঁদ নষ্টচন্দ্র। গণেশের অভিশাপের কারণে শাপগ্রস্ত চাঁদকে গণেশ চতুর্থীর রাতে দর্শন করা নিষিদ্ধ। বিষ্ণু পুরাণ অনুসারে ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থীর রাতে নষ্টচন্দ্র দর্শন করায় শ্রীকৃষ্ণকেও মিথ্যা কলঙ্কের দায়ে ভুগতে হয়েছিল।


পাঠ: অবর্ণা রায়

গল্প রেট করুন